ঢাকা | বঙ্গাব্দ

ইউক্রেন-রাশিয়া শান্তি আলোচনা ২০২৫: ইস্তানবুলে কি শান্তির নতুন দিগন্ত খুলবে?

  • নিউজ প্রকাশের তারিখ : Jun 21, 2025 ইং
ছবির ক্যাপশন:

ই স্তানবুল, ১৫ মে ২০২৫: তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের মধ্যে এক নতুন শান্তির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। তুরস্কের ইস্তানবুলে আজ বৃহস্পতিবার শান্তি আলোচনার আয়োজন করা হয়েছে, যা এই সংঘাতের অবসান ঘটাতে পারে বলে অনেকে আশা করছেন। তবে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির বারবার আহ্বান সত্ত্বেও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এই আলোচনায় সশরীরে অংশ নিচ্ছেন না। ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পুতিনের সহকারী ভ্লাদিমির মেডিনস্কি রাশিয়ার প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন। এই ঘোষণা আলোচনার ফলাফল নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে।
জেলেনস্কির শান্তির আহ্বান ও পুতিনের নীরবতা
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এই আলোচনাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ হিসেবে দেখছেন। তিনি বারবার বলেছেন, পুতিন সরাসরি অংশ নিলে তিনি নিজেও আলোচনায় বসবেন এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে মুখোমুখি কথা বলবেন। বুধবার রাতে এক ভিডিও ভাষণে জেলেনস্কি বলেন, “রাশিয়া থেকে কে আসছেন, আমি তা দেখার অপেক্ষায় আছি। তাদের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে আসা বার্তা এখন পর্যন্ত সন্তোষজনক নয়। তবে, আমরা শান্তির জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।” জেলেনস্কির এই মনোভাব ইউক্রেনের জনগণের মধ্যে আশার সঞ্চার করলেও পুতিনের অনুপস্থিতি অনেকের মনে হতাশা তৈরি করেছে।
তুরস্কের মধ্যস্থতা: এরদোয়ানের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান এই শান্তি আলোচনায় মধ্যস্থতাকারী হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। বৃহস্পতিবার তিনি আঙ্কারায় জেলেনস্কির সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন, যেখানে আলোচনার কৌশল নিয়ে আলোচনা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এরদোয়ান এর আগেও ২০২২ সালের মার্চে ইস্তানবুলে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে আলোচনার আয়োজন করেছিলেন। তিনি বলেন, “যুদ্ধ কারও জন্য সমাধান নয়। আমরা উভয় পক্ষকে একটি টেকসই শান্তি চুক্তির দিকে নিয়ে যেতে চাই।” তুরস্কের ভূমিকা এই আলোচনাকে বিশ্ব মঞ্চে আরও গ্রহণযোগ্য করে তুলেছে।
যুদ্ধের বর্তমান চিত্র
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে ইউক্রেনে যুদ্ধ অব্যাহত রয়েছে। গত এক বছরে রাশিয়ান বাহিনী ধীরে ধীরে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলসহ বিভিন্ন অঞ্চলে তাদের নিয়ন্ত্রণ বাড়িয়েছে। এই যুদ্ধে হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, এবং প্রায় ৮.৮ মিলিয়ন ইউক্রেনীয় দেশ ছেড়ে শরণার্থী হয়েছেন। অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যাও লক্ষাধিক। এই পরিস্থিতিতে শান্তি আলোচনা সফল হলে তা ইউক্রেনের জনগণের জন্য বড় স্বস্তি নিয়ে আসতে পারে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা
আলোচনায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অনুপস্থিতিও আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ট্রাম্প এর আগে পুতিনের উপস্থিতির শর্তে আলোচনায় অংশ নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। তবে, গণমাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে, তিনি এই বৈঠকে থাকছেন না। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অনেকেই এই আলোচনাকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন, কারণ এর ফলাফল বিশ্ব রাজনীতি ও অর্থনীতিতে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।
ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি নাকি নতুন শুরু?
ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে সরাসরি আলোচনার সবশেষ উদাহরণ ছিল ২০২২ সালের মার্চে ইস্তানবুলে। এছাড়া, পুতিন ও জেলেনস্কির মধ্যে শেষ সাক্ষাৎ হয়েছিল ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে। এই দীর্ঘ বিরতির পর ইস্তানবুলে নতুন এই আলোচনা কতটা ফলপ্রসূ হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তবে, জেলেনস্কির দৃঢ়তা এবং তুরস্কের মধ্যস্থতা এই আলোচনাকে একটি নতুন দিগন্তের দিকে নিয়ে যেতে পারে।
শান্তির পথে চ্যালেঞ্জ
এই আলোচনার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো উভয় পক্ষের মধ্যে আস্থার ঘাটতি। রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে দীর্ঘদিনের উত্তেজনা এবং যুদ্ধের ক্ষত এই আলোচনাকে জটিল করে তুলেছে। জেলেনস্কি বলেছেন, “আমরা শান্তি চাই, কিন্তু আমাদের সার্বভৌমত্বের বিনিময়ে নয়।” অন্যদিকে, রাশিয়ার পক্ষ থেকে স্পষ্ট কোনো প্রতিশ্রুতি পাওয়া যায়নি। এই পরিস্থিতিতে তুরস্কের মধ্যস্থতা কতটা কার্যকর হবে, তা সময়ই বলে দেবে।
উপসংহার
ইস্তানবুলে আজকের শান্তি আলোচনা ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় হতে পারে। জেলেনস্কির আশাবাদ, এরদোয়ানের মধ্যস্থতা এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি এই আলোচনাকে বিশ্বের কাছে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে। পুতিনের অনুপস্থিতি সত্ত্বেও, যদি উভয় পক্ষ সৎভাবে শান্তির দিকে এগোয়, তবে এই আলোচনা একটি নতুন শুরুর সূচনা করতে পারে। বিশ্ব এখন অপেক্ষায় আছে, ইস্তানবুল কি শান্তির বার্তা নিয়ে আসবে, নাকি যুদ্ধের ছায়া আরও দীর্ঘ হবে?


নিউজটি আপডেট করেছেন : দৈনিক ইনফো বাংলা

কমেন্ট বক্স