বি শ্বের সবচেয়ে বড় ক্যামেরার তোলা প্রথম ছবিতে লক্ষ লক্ষ ছায়াপথ ও অদেখা গ্রহাণুর ঝলক
ভেরা সি. রুবিন মানমন্দিরের প্রথম পরীক্ষামূলক ছবিতে লক্ষ লক্ষ দূরবর্তী নক্ষত্র ও ছায়াপথের আলো ধরা পড়েছে। এই চিত্রগুলো পৃথিবীর বৃহত্তম ডিজিটাল ক্যামেরা দিয়ে ধারণ করা হয়েছে, যা মহাকাশ অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। রুবিন মানমন্দিরটির নামকরণ করা হয়েছে জ্যোতির্বিদ ভেরা রুবিনের নামে, যিনি ডার্ক ম্যাটারের অস্তিত্ব প্রমাণে অন্যতম পথিকৃৎ। মানমন্দিরের প্রথম পর্যবেক্ষণে ২,১০৪টি গ্রহাণু শনাক্ত করা হয়েছে, যার মধ্যে সাতটি পৃথিবীর কাছে অবস্থিত। এই গ্রহাণুগুলোর কোনোটিই পৃথিবীর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ নয় বলে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন। নতুন চিত্রগুলো কেবল ১০ ঘণ্টার পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে ধারণ করা হলেও, এতে মহাবিশ্বের অভাবনীয় বিশদ বিবরণ উঠে এসেছে। ভেরা সি. রুবিন মানমন্দির প্রতি রাতে হাজার হাজার ছবি তুলতে সক্ষম, যা পৃথিবীর কাছাকাছি লুকানো গ্রহাণুগুলো শনাক্তে সহায়তা করবে। চিলির আন্দিজ পর্বতের চূড়ায় নির্মিত এই মানমন্দিরটি প্রায় দুই দশকের পরিকল্পনা ও নির্মাণ শেষে প্রথম বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণের জন্য প্রস্তুত। আগামী ৪ জুলাই এটি “ফার্স্ট লাইট” অর্জন করবে বলে আশা করা হচ্ছে। মানমন্দিরের Simonyi Survey Telescope এর ব্যাস ৮.৪ মিটার এবং এটি মহাকাশের বিশাল এলাকা কভার করতে সক্ষম। এই টেলিস্কোপ এমনভাবে তৈরি হয়েছে যাতে প্রতিটি রুবিন চিত্রে একসাথে ৪৫টি পূর্ণ চাঁদের সমান আকাশ দেখা যায়। একটি রুবিন ছবি সম্পূর্ণরূপে প্রদর্শন করতে ৪০০টি হাই ডেফিনিশন টিভির প্রয়োজন হবে। প্রথম পরীক্ষামূলক ভিডিওতে দুটি ছায়াপথের বিশদ দৃশ্য দেখানোর পর তা জুম আউট করে প্রায় ১ কোটি ছায়াপথ দেখানো হয়েছে, যা রুবিন ১০ বছরে পর্যবেক্ষণ করবে এমন ২০০০ কোটি ছায়াপথের মাত্র ০.০৫%। মানমন্দিরের ওয়েবসাইটে “কসমিক ট্রেজার চেস্ট” নামে একটি চিত্রে জুম ইন করে দর্শকরা বিশদ দেখতে পারবেন। এই প্রযুক্তিতে সাউন্ডস্কেপ ব্যবহার করে মহাবিশ্বের শব্দ শোনার অভিজ্ঞতাও যুক্ত হয়েছে। এছাড়াও, Trifid এবং Lagoon Nebula-র একটি মজাইক চিত্র প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে ৬৭৮টি আলাদা আলাদা ছবি একত্রিত করে মাত্র সাত ঘণ্টায় গ্যাস ও ধূলিকণার মেঘ চিত্রায়িত হয়েছে। রুবিন মানমন্দির প্রতি কয়েক রাতে একবার করে পুরো আকাশ স্ক্যান করবে, যার মাধ্যমে সময়ের সাথে সাথে তারাগুলোর পরিবর্তন, গ্রহাণুর গতি, এবং ছায়াপথের বিস্তার দেখা যাবে। এই মিশনটিকে বলা হচ্ছে “Legacy Survey of Space and Time”। বিজ্ঞানীরা বলছেন, রুবিন প্রতিরাতে লক্ষ লক্ষ পরিবর্তনশীল বস্তু শনাক্ত করতে পারবে। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অ্যারন রুডম্যান বলেন, এই ক্যামেরা গাড়ির আকারের এবং অভাবনীয় বিশদে ছবি তুলতে সক্ষম। তিনি এই ক্যামেরার নির্মাণ ও পরীক্ষার দায়িত্বে ছিলেন। রুবিনের মতো টেলিস্কোপ ডার্ক এনার্জি এবং ডার্ক ম্যাটার সম্পর্কেও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেবে। নাসা বলছে, এই দুই উপাদানই মহাবিশ্বের বেশিরভাগ অংশ গঠন করে, যদিও সেগুলো সরাসরি দেখা যায় না। রুবিন এই রহস্য উদঘাটনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে বিজ্ঞানীদের আশা। রুবিন মানমন্দির একটি “ডিসকভারি মেশিন” হিসেবেও কাজ করবে, যেটি অজানা মহাজাগতিক বস্তু ও অঞ্চলের দিকে অন্য টেলিস্কোপকে নির্দেশ করতে পারবে। বিজ্ঞানীদের মতে, রুবিনের এমন ক্ষমতা আছে যে এটি মহাবিশ্বকে সম্পূর্ণ নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার সুযোগ করে দেবে। এখন পর্যন্ত পাওয়া এই প্রাথমিক চিত্রগুলো থেকেই বোঝা যাচ্ছে, আগামী বছরগুলোতে রুবিন মানমন্দির মহাকাশ বিজ্ঞানে এক নতুন বিপ্লব ডেকে আনবে।
দৈনিক ইনফো বাংলা