ক্রি কেট মাঠে নাটকের নাম বাংলাদেশ! ১৫২ রানের সহজ লক্ষ্য তাড়াতে উদ্বোধনী জুটিতে ১০৯ রান যোগ করে স্বপ্নের মতো জয়ের পথে এগিয়ে যাওয়া সত্ত্বেও, রাশিদ খানের জাদুকরী স্পেলে চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়ে বাংলাদেশ। কিন্তু নুরুল হাসান সোহান ও রিশাদ হোসেনের নির্ভীক ব্যাটিংয়ে শেষ পর্যন্ত ৮ বল বাকি রেখে ৪ উইকেটে জয় ছিনিয়ে নেয় টাইগাররা। তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানকে হারিয়ে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ।
ম্যাচটি ছিল রোমাঞ্চের পূর্ণিমা—অনায়াস জয় থেকে অবিশ্বাস্য হারের ছায়ায়, আবারও জয়ের আলোয়। পারভেজ হোসেনের অপরাজেয় ৫৪ রানের জন্য তাকে ম্যান অব দা ম্যাচের মর্যাদা দেওয়া হয়।
আফগানিস্তানের ইনিংস: বাংলাদেশী বোলারদের চাপে আটকে ১৫১
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা আফগানিস্তানের শুরু ছিল উজ্জ্বল, কিন্তু বাংলাদেশের বোলাররা দ্রুত নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন। ইব্রাহিম জাদরান তাসকিন আহমেদের প্রথম ওভারে তিন বাউন্ডারি করে ম্যাচ শুরু করেন, কিন্তু নাসুম আহমেদের বলে স্লগ করে বোল্ড হয়ে যান (১৫)। সেদিকউল্লাহ আটালকে তানজিম হাসান সাকিব আউট করেন (১০), আর দারভিশ রাসুলি রান আউট হয়ে ফেরেন (০)। পাওয়ারপ্লেয়ে ৩ উইকেট হারিয়ে আফগানরা মাত্র ৩৩ রান তোলে।
রাহমানউল্লাহ গুরবাজ ফর্ম ফিরিয়ে পাওয়ারপ্লে শেষে রিশাদ হোসেনকে ছক্কা মারেন, কিন্তু মোহাম্মাদ ইসহাক সীমানায় ধরা পড়েন (১)। গুরবাজ ও আজমাতউল্লাহ ওমারজাইয়ের ৪০ রানের জুটি গড়ে ওঠে, কিন্তু রিশাদ ওমারজাইকে (১৮) আউট করেন। গুরবাজ ছন্দে ফিরে আসার ছোঁয়া দেন (৩১ বলে ৪০), কিন্তু তানজিমের স্লোয়ারে আউট।
মোহাম্মাদ নাবি তাসকিনের ওভারে তিন ছক্কা মেরে ২২ রান যোগ করেন (২৫ বলে ৩৮), কিন্তু রাশিদ খান মুস্তাফিজুরের স্লোয়ারে আউট (৪)। শেষ ওভারে তানজিমের বলে শারাফউদ্দিন আশরাফ ছক্কা ও চার মেরে দলকে ১৫১/৯-এ পৌঁছে দেন (১৭*)। বাংলাদেশের বোলাররা চমৎকার ছিলেন: তাসকিন (১/৪০), তানজিম (২/৩৪), রিশাদ (২/৩৩)।
১৫২ রানের লক্ষ্য তাড়াতে তানজিদ হাসান ও পারভেজ হোসেন শুরুতে সময় নেন—প্রথম তিন ওভারে ১৪ রান। তারপর ঝড় উঠে! পরের তিন ওভারে ৩৬ রান যোগ হয়। পারভেজ মোহাম্মাদ নাবির ওভারে দুইবার জীবন পেয়ে দুটি ছক্কা মারেন, তানজিদও নাবির দুই ওভারে দুটি ছক্কা ঠুকে দেন। পাওয়ারপ্লে শেষে দুজনের জুটি অটুট, এবং ১১তম ওভারে স্কোর পেরিয়ে যায় ১০০। পারভেজ ৩৪ বলে ফিফটি, তানজিদ ৩৫ বলে—জয় মনে হয় স্রেফ সময়ের ব্যাপার!
কিন্তু দ্বাদশ ওভারে ফারিদ আহমেদের বলে পারভেজ এলবিডব্লিউ (৩৭ বলে ৫৪)। এশিয়া কাপের তারকা সাইফ হাসান রাশিদের গুগলিতে শূন্যে ফেরেন। রাশিদের পরের ওভারে তিন বলে অধিনায়ক শাকিব আলি (৬) ও শামীম হোসেন (০) আউট! ওই ওভারেই তানজিদও বিদায় (৩৭ বলে ৫১)। নুর আহমেদ তানজিমকে শূন্যে ফেরিয়ে দেন। বিনা উইকেটে ১০৯ থেকে ৯ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে স্কোর ১১৮/৬—হারের ছায়া ঘনিয়ে ওঠে!
সৌভাগ্য, রাশিদ ও নুরের ওভার শেষ। সোহান ও রিশাদ (শূন্যে জীবন পেয়ে) শিকারী বোলারদের ওপর ছড়ি ঘুরিয়ে শেষ চার ওভারে ৩৪ রান যোগ করেন। শেষ ওভারে সোহান দুই ছক্কায় ১৩ বলে ২৩* রান, রিশাদ ৯ বলে ১৪*—ম্যাচ শেষ!
| ব্যাটসম্যান/বোলার | রান/উইকেট | বল/ওভার |
|---|---|---|
| আফগানিস্তান (২০ ওভারে ১৫১/৯) | ||
| ইব্রাহিম জাদরান | ১৫ | - |
| সেদিকউল্লাহ আটাল | ১০ | - |
| রাহমানউল্লাহ গুরবাজ | ৪০ | ৩১ |
| দারভিশ রাসুলি | ০ | - |
| মোহাম্মাদ ইসহাক | ১ | - |
| আজমাতউল্লাহ ওমারজাই | ১৮ | - |
| মোহাম্মাদ নাবি | ৩৮ | ২৫ |
| শারাফউদ্দিন আশরাফ | ১৭* | - |
| রাশিদ খান | ৪ | - |
| নুর আহমেদ | ৬ | - |
| বোলিং (বাংলাদেশ) | ||
| তাসকিন আহমেদ | ১/৪০ | ৪ |
| নাসুম আহমেদ | ১/১৮ | ৪ |
| তানজিম হাসান সাকিব | ২/৩৪ | ৪ |
| মুস্তাফিজুর রহমান | ১/২৪ | ৪ |
| রিশাদ হোসেন | ২/৩৩ | ৪ |
বাংলাদেশ (১৮.৪ ওভারে ১৫৩/৬) | ||
|---|---|---|
| তানজিদ হাসান | ৫১ | ৩৭ |
| পারভেজ হোসেন | ৫৪ | ৩৭ |
| সাইফ হাসান | ০ | - |
| শাকিব আলি | ৬ | - |
| শামীম হোসেন | ০ | - |
| নুরুল হাসান সোহান | ২৩* | ১৩ |
| তানজিম হাসান সাকিব | ০ | - |
| রিশাদ হোসেন | ১৪* | ৯ |
| বোলিং (আফগানিস্তান) | ||
| ফারিদ আহমেদ | ১/২৬ | ৩ |
| আজমাতউল্লাহ ওমারজাই | ০/৩২ | ২.৪ |
| মোহাম্মাদ নাবি | ০/২৭ | ৩ |
| রাশিদ খান | ৪/১৮ | ৪ |
| নুর আহমেদ | ১/২১ | ৪ |
| শারাফউদ্দিন আশরাফ | ০/২৫ | ২ |
ফলাফল: বাংলাদেশ ৪ উইকেটে জয়ী (৮ বল বাকি)। ম্যান অব দা ম্যাচ: পারভেজ হোসেন।
দৈনিক ইনফো বাংলা