ঢাকা | বঙ্গাব্দ

দেশজুড়ে অবৈধ অস্ত্রের স্রোত, চাপে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

  • নিউজ প্রকাশের তারিখ : Oct 14, 2025 ইং
ফাইল ছবি ছবির ক্যাপশন: ফাইল ছবি
দেশজুড়ে অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদের বিস্তার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থান ও ৫ আগস্টের সরকার পতনের পর বিভিন্ন থানা ও সরকারি স্থাপনা থেকে লুট হওয়া বিপুল পরিমাণ অস্ত্রের বড় অংশ এখনো উদ্ধার হয়নি। এ অবস্থায় নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, এই অস্ত্রগুলো আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে পারে।

পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের আন্দোলনের সময় মোট ৪৬০টি পুলিশ স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর মধ্যে ১১৪টি থানা এবং ১,০২৪টি যানবাহন ভাঙচুর বা অগ্নিসংযোগের শিকার হয়। সেই সময় ৫,৭৫৬টি অস্ত্র লুট হয়, যার মধ্যে ৪,৪১৩টি উদ্ধার করা গেছে। এখনও নিখোঁজ রয়েছে প্রায় ১,৩৪৩টি অস্ত্র ও আড়াই লাখেরও বেশি রাউন্ড গুলি। উদ্ধার না হওয়া অস্ত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে চাইনিজ রাইফেল, পিস্তল ও এসএমজি—যেগুলো ভয়ংকর ধ্বংসাত্মক সক্ষমতা রাখে।

এদিকে সেনাবাহিনীও সম্প্রতি এক মাসব্যাপী অভিযানে ৬৫টি অবৈধ অস্ত্র ও প্রায় তিনশ গুলি উদ্ধার করেছে। কারাগার অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গণঅভ্যুত্থানের সময় দেশের পাঁচটি কারাগার থেকে ২,২০০-র বেশি বন্দি পালিয়ে যায় এবং ৬৭টি অস্ত্র লুট হয়—যার মধ্যে ২৭টি উদ্ধার করা গেছে। এখনও অনেক দাগি বন্দি ও অস্ত্রচোরচক্র ধরা-ছোঁয়ার বাইরে।

অভিযোগ উঠেছে, লুট হওয়া অস্ত্রের কিছু অংশ ইতিমধ্যেই কালোবাজারে বিক্রি হচ্ছে। চট্টগ্রামে গ্রেপ্তার দুই যুবকের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া রিভলবার ও গুলি, ঢাকায় খিলগাঁও থেকে আটক রাজিব হোসেনের কাছ থেকে পাওয়া চাইনিজ রাইফেলের গুলি—সবই এই অবৈধ ব্যবসার প্রমাণ বহন করে। সীমান্তেও বেড়েছে অস্ত্র পাচার। বিজিবি জানিয়েছে, সম্প্রতি সীমান্ত এলাকায় অভিযান চালিয়ে দেশীয় পিস্তল, ম্যাগাজিন ও গুলি উদ্ধার করা হয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই পরিস্থিতি শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য নয়, বরং সাধারণ জনগণের জন্যও বড় হুমকি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিশ্লেষক ড. তৌহিদুল হক বলেন, “লুট হওয়া অস্ত্র যদি অপরাধীদের হাতে থেকেই যায়, তাহলে জাতীয় নির্বাচনসহ বিভিন্ন সময় তা বিশৃঙ্খলার কারণ হতে পারে। দ্রুত গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়িয়ে এসব অস্ত্র উদ্ধার করতে হবে।”

সরকার ইতোমধ্যে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে পুরস্কার ঘোষণা করেছে। শর্টগান বা পিস্তল উদ্ধারে ৫০ হাজার টাকা, চাইনিজ রাইফেল বা এসএমজি উদ্ধারে ১ লাখ, আর এলএমজি উদ্ধার হলে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানিয়েছেন, “সব অস্ত্র উদ্ধার সম্ভব নাও হতে পারে, তবে নির্বাচনে স্থিতিশীল পরিবেশ নিশ্চিত করতে আমরা সব ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছি। প্রয়োজনে বিশেষ অভিযানের প্রস্তুতিও চলছে।”

দেশজুড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রতিদিন অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু যতদিন না লুট হওয়া অস্ত্র ও পলাতক আসামিদের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা যায়, ততদিন নির্বাচনের নিরাপত্তা ও জনশান্তি—দুই-ই থাকবে ঝুঁকিতে।

নিউজটি আপডেট করেছেন : Sarwar Rana

কমেন্ট বক্স