ঢাকা | বঙ্গাব্দ

ভাষাসংগ্রামী আহমদ রফিকের জীবনাবসান

  • নিউজ প্রকাশের তারিখ : Oct 3, 2025 ইং
ছবির ক্যাপশন:

বাংলা ভাষা আন্দোলনের অন্যতম সৈনিক, বিশিষ্ট লেখক ও সংস্কৃতিকর্মী আহমদ রফিক আর আমাদের মাঝে নেই। ৯৬ বছর বয়সে বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর ২০২৫) রাত ১০টা ১২ মিনিটে রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। হাসপাতালে উপস্থিত সংস্কৃতিকর্মী দীপান্ত রায়হান জানান, ভেন্টিলেশন সাপোর্ট খোলার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

দীর্ঘদিনের অসুস্থতা

আহমদ রফিক বেশ কিছুদিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ক্রনিক কিডনি ফেইলিওর, আলঝেইমার্স, পারকিনসন্স রোগ, ইলেকট্রোলাইটস ইমব্যালেন্স, বেডশোর এবং ফুসফুসের সংক্রমণের কারণে তার শারীরিক অবস্থা ক্রমাগত অবনতি হচ্ছিল। গত ১১ সেপ্টেম্বর তাকে হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতাল থেকে বারডেম হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। এর আগে তিনি এক মাসের মধ্যে দুই দফা ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। সোমবার থেকে তিনি বারডেমে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

শেষ শ্রদ্ধা ও দেহদান

আহমদ রফিক ফাউন্ডেশনের ট্রাস্টি ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ইসমাইল সাদী জানান, শনিবার (৪ অক্টোবর ২০২৫) সকাল ১১টায় সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য তার মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নেওয়া হবে। এরপর তার ইচ্ছানুযায়ী মরদেহ বারডেম হাসপাতালে দান করা হবে চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণার জন্য। ফলে তার দাফন সম্পন্ন হবে না।

জীবনের শুরু ও ভাষা আন্দোলন

১৯২৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শাহবাজপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন আহমদ রফিক। মুন্সিগঞ্জের হরগঙ্গা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাসের পর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়নে ভর্তি হন। কিন্তু আবাসিক সুবিধার অভাবে পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। ১৯৫২ সালে তৃতীয় বর্ষে পড়ার সময় তিনি ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। ফজলুল হক হল, ঢাকা হল এবং মিটফোর্ডের ছাত্রদের সঙ্গে সংযোগ রক্ষা এবং সভা-সমাবেশে নিয়মিত অংশ নিতেন তিনি। ১৯৫৪ সালে আন্দোলনকারী ছাত্রদের মধ্যে একমাত্র তার নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়।

১৯৫৫ সালে প্রকাশ্যে ফিরে এসে তিনি পড়াশোনায় মনোনিবেশ করেন এবং এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করেন। তবে চিকিৎসক হিসেবে পেশা না বেছে লেখালেখিকে জীবনের ধ্রুবতারা হিসেবে গ্রহণ করেন।

সাহিত্য ও সম্মাননা

১৯৫৮ সালে তার প্রথম প্রবন্ধের বই ‘শিল্প সংস্কৃতি জীবন’ প্রকাশিত হয়। এরপর তিনি লেখালেখিতে নিজেকে পুরোপুরি নিয়োজিত করেন। তার অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, রবীন্দ্রত্ত্বাচার্য উপাধিসহ অসংখ্য সম্মাননা লাভ করেন।

ব্যক্তিগত জীবন

আহমদ রফিক রাজধানীর নিউ ইস্কাটনে একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন। ২০০৬ সালে তার স্ত্রী মারা যান। এই দম্পতির কোনো সন্তান ছিল না।

উত্তরাধিকার

আহমদ রফিকের জীবন ও কর্ম বাংলা ভাষা আন্দোলন এবং সাংস্কৃতিক অঙ্গনে এক অমলিন স্মৃতি হয়ে থাকবে। তার দেহদানের সিদ্ধান্ত চিকিৎসা বিজ্ঞানের প্রতি তার শ্রদ্ধা ও মানবতার প্রতি অঙ্গীকারের প্রতীক।


নিউজটি আপডেট করেছেন : দৈনিক ইনফো বাংলা

কমেন্ট বক্স